৫ বছর ধরে ‘হোম অফিস’ করেন চৌহাট ইউপি চেয়ারম্যান

ধামরাই সংবাদ সারাদেশ

মোঃ সবুজ, ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ পারভীন হাসান প্রীতি। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার চৌহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। নির্বাচিত হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে এক দিনের জন্যও পা রাখেননি পরিষদ ভবনে। পরিষদ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে চেয়ারম্যান তাঁর বাড়িতে বসে কার্যক্রম চালান।

স্থানীয়রা জানায়, চেয়ারম্যান না যাওয়ায় সচিব, সংরক্ষিত নারীসহ সাধারণ সদস্যরাও পরিষদে যান না। সরকারি নিয়ম অনুসারে পরিষদে ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্র, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সেবাকর্মীর দপ্তর থাকার কথা। যাতে করে সাধারণ মানুষ সহজে সরকারি সেবা ভোগ করতে পারে। বাস্তবে এসব কার্যক্রমের কোনো ছিটেফোঁটা খুঁজে পাওয়া যায়নি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে।

সরেজমিন ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে কেউ যাতায়াত করে না। নির্মাণের পর থেকে ক্রমে এটি ভূতুড়ে হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে পারভীন হাসান প্রীতি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।

ঘুরে ঘুরে দেখা মিলল ভবনের বিভিন্ন অংশে ডজনখানেক মৌমাছির চাক। কোথাও ইউনিয়ন পরিষদের নাম লেখা নেই। কক্ষের দরজা ভাঙা, জানালাগুলো খোলা। এলোমেলো থাকা চেয়ার-টেবিলে এক ইঞ্চি পুরু বালুর আস্তরণ। বালুতে ঢেকে গেছে চেয়ারম্যানের কক্ষে টানানো থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। ইউপি সচিবের কক্ষে প্রয়োজনী কাগজপত্র মাকড়সার জালে ঢেকে আছে। বারান্দা ও মাঠে ময়লার স্তূপ। ভবনের কক্ষগুলোতে যে মাদকসেবীদের নিরাপদ আড্ডাখানা তা বোঝা গেল।

এ বিষয়ে কফিল উদ্দিন বলেন, ‘চেয়ারম্যান যদি বাড়িতে বসে অফিস করেন, তাহলে সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করে ভবন নির্মাণ করছে কেন? আমি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।’

রাজাপুরবাসী জানায়, চেয়ারম্যানের বাড়িতে পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় করা হয়েছে। সেখানে সচিব ও সদস্যরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। অস্থায়ী এই কার্যালয় থেকে ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়।

গোলাপী বেগম বলেন, ‘ভিজিডির চালসহ সরকারের সব সাহায্য-সহযোগিতা চেয়ারম্যানের বাড়ি থিকা নিতে হয় আমাদের।’

ওয়ার্ড সদস্য সাইফুল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে কার্যক্রম পরিচালিত না হওয়ার কারণে পশ্চিম এলাকার মানুষের দুর্ভোগ নিত্যদিনের।

১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য সাথী আক্তার অভিযোগ করেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি সব কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। কেন চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে তা করা হবে?’

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল আলীম খান সেলিম বলেন, পারভীন হাসান প্রীতি চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর একদিনও অফিস করেনি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।

ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে বসা হয় না, কথাটি সত্য। আমি চেয়ারম্যানকে বলেছি ইউনিয়ন পরিষদে বসার ব্যবস্থা করতে কিন্তু তিনি করেন নি। চৌহাট বাজারে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেটারে অস্থায়ী অফিস করচ্ছি।

চৌহাট ইউপি চেয়ারম্যান পারভীন হাসান প্রীতিকে ইউনিয়ন পরিষদে অফিস না করার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্যস্ত আছি। পরে বক্তব্য দিব বলে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামিউল হক বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে সরকারি সেবা কার্যক্রম পরিচালনা হয় না—এমন তথ্য আমার জানা নেই। আমি অবশ্যই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *