ইউরেনিয়ামের মজুত ২০ গুণ বাড়াতে চায় ইরান : জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক

ইউরেনিয়ামের মজুত ২০ গুণ বাড়াতে চাচ্ছে ইরান। জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা এই ঘটনাকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে। এখন পর্যন্ত ইউরেনিয়ামের মজুত ১২ গুণের বেশি বৃদ্ধি করেছে ইরান।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির (আইএইএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুতের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৪৪৩ কেজি। মূলত পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। তবে ইরান সবসময়ই দাবি করে আসছে যে, তারা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।

ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের মজুত আরও বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আইএইএ। ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরানকে ইউরেনিয়ামের মজুতের পরিমাণ ৪ শতাংশের কম রাখতে হবে। দেশটির ৩.৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুত থাকার কথা থাকলেও এর চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। চুক্তির বাইরে পরমাণুর মজুত বাড়িয়েই চলেছে দেশটি।

বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ইরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছে। এছাড়া ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প। এসব কারণে ইরান অন্য সময়ে চেয়ে বেশি মাত্রায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়াতে শুরু করে। তবে এখনও পরমাণু চুক্তি নিয়ে আশাবাদী যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং চীন।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে যে, ইরান ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ পরমাণু সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা ফোর্ডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্লান্টকে জানিয়েছে। ইরানের এই পরমাণু সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পটি দেশটির একটি পাহাড়ের ভেতরে নির্মিত একটি স্থাপনা।

সংস্থাটি আরও বলছে, ইরান যে চিঠিটি দিয়েছে সেখানে এই সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম কখন হবে তা বলা হয়নি। ২০১৯ সালের পরমাণু চুক্তিতে শর্ত দেয়া হয়েছিল যে, ইরান ৩.৬৭ শতাংশের বেশি বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না, কিন্তু সেই শর্ত তারা লঙ্ঘন করেছে। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা তখন থেকেই ৪.৫ শতাংশ পর্যন্ত স্থির রয়েছে।

তবে দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার প্রতিক্রিয়ায় গত মাসে ইরানের পার্লামেন্ট পরমাণু সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা বিষয়ক একটি আইন পাস করে।

ওই বিলটিতে বলা হয়েছে হয়েছে যে, ইরানের তেল ও আর্থিক খাতের উপর নিষেধাজ্ঞাগুলো দুই মাসের মধ্যে সহজতর না করলে ইরান সরকার ২০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ আবারও শুরু করবে।

নাটানজ এবং ফোর্ডোতে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় জাতিসংঘের পরিদর্শকদের যেন যেতে দেয়া না হয় সে বিষয়ে ওই আইনে আদেশ দেয়া হয়েছে।

গত মাসের শুরুর দিকে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য ২০ শতাংশ মাত্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে ইউরেনিয়ামের উৎপাদন ও মজুত রাখতে পারার বিষয়ে আইন পাস করে ইরানের পার্লামেন্ট।

২০১৫ সালে চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে ওই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি পরমাণু চুক্তিতে ফিরে যাবেন।

ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড গ্যাস সেন্ট্রিফিউজে ঢুকিয়ে পরমাণু ফিশনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত আইসোটপটি আলাদা করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করা হয়। এটি ইউ-২৩৫ নামে পরিচিত।

স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ইউ-২৩৫ এর ঘনত্ব সাধারণত ৩-৫ শতাংশ হয়। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় এই স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানী উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনেক বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ঘনত্ব ২০ শতাংশ বা তার বেশি হতে পারে এবং এটি গবেষণার চুল্লিগুলোয় ব্যবহৃত হয়। তবে অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ বা তারও বেশি সমৃদ্ধ হতে হয়।

ইরান জোর দিয়ে বলে আসছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। তবে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে এমন সন্দেহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ২০১০ সালে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *